সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

 আবু হামিদ মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ আল-গাজ্জালি  বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই ইমাম গাজ্জালী হিসেবে বেশি পরিচিত, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ ইমাম আল-গাজ্জালির ১০৫৮ সালে ইরানের খোরাসানের তুশ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা মুহাম্মদ তখনকার সময়ে একজন স্বনামধন্য সূতা ব্যাবসায়ী ছিলেন। গাজল অর্থ সূতা, নামকরনের এই সামঞ্জস্যতা তাই তার বংশকে গাজ্জালী নামে পরিচিত করেছে। 

 আবার কারো মতে তিনি হরিণের চক্ষু বিশিষ্ট অপরূপ সুদর্শন ছিলেন, আর গাজাল অর্থ হরিণ, তাই পিতা মাতা তাকে শৈশবে আদর করে গাজ্জালী বলে ডাকতেন। উভয় বর্ণনানুসারে তাকে গাজ্জালী বা গাজালীও বলা হয়। তিনি সে সময়ে ইরানের শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেন। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য তিনি দেশভ্রমণেও বেরিয়েছিলেন। ১১১১ সালে তিনি মারা যান।

ছোট বেলায়ই তিনি তার বাবাকে হারান। তার শিক্ষা জীবন ও বাল্যকাল কাটে তুস নগরীতে। ইমাম আল গাজ্জালি (রহ•) তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠতম ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন। পঞ্চম শতকের মধ্যভাগে এমন এক পরিস্থিতিতে ইমাম গাজ্জালী জন্মগ্রহণ করেন যখন পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শণের বিস্তার লাভ করে ছিল।

তিনি পরিণত বয়সে ৪৮৪ হিজরিতে বাগদাদ গমন করেন। বাগদাদে তত্কালীন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনায় যোগ দেন। মুসলিম দর্শন, ফিকাহ, ইলমুল কালাম (ধর্মতত্ত্ব) বিষয়ে তিনি সর্বকালের প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীদের একজন। ইমাম গাজ্জালীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতি ছিল অগাধ তৃষ্ণা। নিযামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনা তার এই জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করতে পারেনি। তাই অল্প সময়ের মধ্যে নিযামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনা ছেড়ে সৃষ্টি রহস্যের সন্ধানে তিনি পথে বেরিয়ে পড়েন। প্রায় দশ বছর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে অবশেষে আবার তিনি বাগদাদে তিনি তৎকালীন দুনিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় বাগদাদের নেজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকটর নিযুক্ত হন।

 নেজামুল মুলক তুসী মালিক শাহ সালজুকী ও বাগদাদের খলিফার দরবারে যোগ্য আসন লাভ করেন। সমকালীন রাজনীতিতে এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেন যে, সালজুকী শাসক ও আব্বাসীয় খলিফার মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধ দুর করার জন্যে তার খেদমত হাসিল করা হতো। পার্থিব উন্নতির এই পর্যায়ে উপনিত হবার পর অকস্মাৎতার জীবনে বিপ্লব আসে। নিজের যুগের তত্ত্বগত নৈতিক ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও তমুদ্দুনিক জীবনধারাকে যত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন, ততই তার মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলতে থাকে এবং ততই বিবেক তারস্বরে শুরু করে যে, এই পুঁতিগন্ধময় সমুদ্রে সন্তরণ করা তোমার কাজ নয়, তোমার কাজ অন্য কিছু। অবশেষে সমস্ত রাজকীয় মর্যাদা, লাভ , মুনাফা, ও মর্যদাপূর্ণ কার্যসমূহেকে ঘৃণাভাবে দূরে নিক্ষেপ করেন। কেননা এগুলোই তার পায়ে শিকল পরিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর ফকির বেশে দেশ পর্যটনে বেরিয়ে পড়েন। বনে-জঙ্গলে ও নির্জন স্থানে বসে নিরিবিলিতে চিন্তায় নিমগ্ন হন। বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মুসলমানদের সংগে মেলামেশা করে তাদের জীবনধারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।দীর্ঘকাল মোজাহাদা ও সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে থাকেন। ৩৮ বছর বয়সে বের হয়ে পূর্ণ দশ বছর পর ৪৮বছর বয়সে ফিরে আসেন। ওই দীর্ঘকালীন চিন্তা ও পর্যবেক্ষণের পর তিনি যে কার্য সম্পাদন করেন তা হলো এই যে, বাদশাহদের সংগে সম্পর্কেচ্ছেদ করেন। এবং তাদের মাসোহারা গ্রহণ করা বন্ধ করেন। বিবাদ ও বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার জন্যে শপথ করেন। সারকারী প্রভাবাধীনে পরিচালিত শিক্ষায়তনসমূহে কাজ করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং তুসে নিজের একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি নির্বাচিত ব্যক্তিদের বিশেষ পদ্ধতিতে তালিম দিয়ে তৈরি করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু সম্ভবতঃ তার এ প্রচেষ্টা কোনো বিরাট বৈপ্লবিক কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম হয়নি, কেননা এ পদ্ধতিতে কাজ করার জন্যে তার আয়ু তাকে পাঁচ ছয় বছরের বেশি অবকাশ দেয়নি।

Post a Comment

0 Comments