সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

খিজির (আ.)-এর জীবন ও মৃত্যু

 ৬৫. অবশেষে তারা [মুসা (আ.) ও তার সঙ্গী] আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের সাক্ষাৎ পেল [তার নাম খিজির (আ.)], যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে (বিশেষ) অনুগ্রহ করেছি। আর তাকে আমার পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞান দান করেছি। [সুরা : কাহফ, আয়াত : ৬৫ (তৃতীয় পর্ব)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর মুসা (আ.) এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, মহান আল্লাহ যাঁর ওপর বিশেষ রহমত বর্ষণ করেছেন এবং তাঁকে বিশেষ জ্ঞান দান করেছেন। তিনি আল্লাহর নবী খিজির (আ.)।

পবিত্র কোরআনের ইতিহাস রচনার মূলনীতি হলো, কোনো ঘটনার ঠিক ততখানি উল্লেখ করা হয়ে থাকে যতখানি হেদায়েতের পথপরিক্রমায় প্রয়োজন। ইতিহাসের চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরআনের উদ্দেশ্য নয়। এই মূলনীতির আলোকে খিজির (আ.)-এর ব্যক্তিপরিচিতি সম্পর্কেও সামান্য কিছু তথ্য কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানা কঠিনতম ব্যাপার। তাই তাঁকে নিয়ে নানা মিথ ও মুখরোচক ঘটনা জন্ম নিয়েছে। তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হলো, তিনি কি এখনো জীবিত আছেন? তিনি কি কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে তাফসিরবিদ, হাদিসবিদ ও ইতিহাসবিদরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। সুফি ভাবধারায় বিশ্বাসী সবাই মনে করেন, খিজির (আ.) এখনো জীবিত এবং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। বহু প্রখ্যাত ব্যক্তিও এ তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইবনে কাসির (রহ.), ইমাম নববী (রহ.) ও ইবনুস সালাহ (রহ.)-এর মতো জগদ্বিখ্যাত মুসলিম মনীষীরা। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ‘সবাই এ বিষয়ে একমত যে খিজির (আ.) এখনো জীবিত আছেন।’ [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৪৫ (আরবি, দারু আলামিল কুতুব, ২০০৩)]

ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, ‘সব আলেম এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে খিজির (আ.) জীবিত। এবং তিনি আমাদের সামনে বিদ্যমান। আর সুফিদের সবাই এ মতবাদে বিশ্বাসী।’ [শারহুন নববী, বাবুন মিন ফাদ্বাইলিল খিদ্বির, পৃষ্ঠা ৫১৯ (আরবি, দারুল খাইর, ১৯৯৬)]

ইবনে সালাহ (রহ.) লিখেছেন, ‘আলেম ও পুণ্যবান সবার বিশ্বাস হলো খিজির (আ.) জীবিত।’ (শারহুন নববী, প্রাগুক্ত)

খিজির (আ.) সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করার কারণ কী? এর জবাবে ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ‘ইতিহাসবিদরা এর দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এক. কথিত আছে যে আদম (আ.) তুফান থেকে বের হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করলে খিজির (আ.) তাঁকে দাফন করেন। তখন তিনি খিজির (আ.)-এর জন্য এ মর্মে দোয়া করেছেন, যেন খিজির (আ.) আদম (আ.)-এর মতো হায়াত লাভ করেন। এ দোয়ার বরকতে তিনি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন। তবে এ ঘটনার সপক্ষে অকাট্য বা বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

দুই. খিজির (আ.) সম্পর্কে আরো কথিত আছে যে তিনি জুলকারনাইন বাদশাহর সঙ্গে ‘আবে হায়াত’-এর সন্ধান পেয়েছেন। এবং সৌভাগ্যবশত তিনি সেই আবে হায়াত তথা অমরত্বের অমীয় সুধা পান করে ধন্য হয়েছেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ‘আয যাহরুন নাদ্বার ফি হালির খাদ্বার’, পৃষ্ঠা ২৬)

এই ‘আবে হায়াত’-এর ঘটনাটি ইতিহাসবিদ ইবনুল আসির (রহ.) তাঁর ‘আল কামিল ফিত তারিখ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁর সূত্রে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’র তৃতীয় খণ্ডে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। উভয় ঘটনার বর্ণনাসূত্রে রয়েছেন আবু জাফর আল বাকির ও তাঁর পিতা জাইনুল আবেদিন (রহ.)। তাঁরা উভয়ে শিয়া মতবাদের বিভিন্ন উক্তির প্রসিদ্ধ বর্ণনাকারী।

Post a Comment

0 Comments