জন্মের পূর্বে সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে আত্মা জ্ঞানে যদিও পূর্ণ থাকে তবু তার পিছনের কর্মফল তাকে চম্বুকের মতে টেনে নিয়ে যায় পরবর্তী ফলস্বরুপ দেহ ঘরে। মানব দেহতে এসে সৃষ্টির সর্ব প্রথম নিজের জ্ঞান প্রকাশ করতে গিয়ে আত্মা নিজেই নিজেকে ধোকা দিতে শুরু করে এবং এভাবে চলতে চলতে এক দেহের কর্মফল তাকে আরেক দেহতে গিয়ে ভোগ করতে হয়।
সুতরাং যদি সকল আত্মাই পুরাতন হয় এবং নতুন সৃষ্টি কেউ না হয়ে থাকে, তাহলে বলা যায় -- আত্মাকে আবার নতুন করে কেন জ্ঞান অর্জন করতে হয়?
যেহেতু জ্ঞান দিয়েই তৈরী হয়েছে আত্মা অর্থাৎ আত্মাই জ্ঞান সেহেতু জ্ঞান অর্জনের বিষয় নয় , জ্ঞান জাগ্রত করার বিষয় , উপলব্ধির বিষয়। জ্ঞান মানুষের অন্তরে ঘুমন্ত, জ্ঞানে মানুষের আত্মা পূর্ণ, প্রয়োজন কেবল আত্মা জাগ্রত করা, আত্মা কে চেতন করা। তাই ফকির লালন শাঁইজী বলেছিলেন-- আত্মা রুপে কর্তা হরি; আবার -- আত্মা চেতন হলে জানতে পাবি।
আত্মার এই জ্ঞান থাকে সুপ্ত বা ঘুমন্ত সেই জ্ঞান জাগাতে হয় । আত্মার জ্ঞান পূর্ণ জাগ্রত হলেই আত্মা পূর্ণ শক্তিশালী হয়ে উঠবে,আত্মা পাবে তার কাঙ্খিত পূর্ণতা । আত্মার জ্ঞান পূর্ণ জাগ্রত করতে পারলেই মিলবে মানুষের পূর্ণ মুক্তি তখন মানুষের বা আত্মার
কোন সীমাবদ্ধতা থাকবেনা । আত্মা হয়ে যাবে পূর্ণ শক্তিশালী পূর্ণ স্বাধীন।
যেমন: সালাত অর্থ স্বরণ করা।
এই স্বরণ শুধু হাতে গুণা পাঁচ ওয়াক্তে টাইম মাফিক নয়, পাঁচ ওয়াক্ত হচ্ছে প্রাথমিক ট্রেনিং। এই ট্রেনিং এ পাশ করার পর প্রতিটা দমে দমে আল্লাহ কে স্বরণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং যিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এমন একজন মহা মানবের নিকট শপথ গ্রহণ করে স্বরুপ কে প্রতিষ্ঠিত করার উপায় খুজে বের করতে হবে। অত:পর এই স্বরণ এমন হতে হবে যে, স্বরণ করতে করতে মহা সত্ত্বার সাথে সংযোগ হয়ে আপন সত্ত্বা জাগ্রত হয়ে উঠবে। সত্ত্বা অর্থ আত্মা। সুতরাং মহাসত্ত্বা বা মহা আত্মার সাথে সংযোগ করে আপন আত্মাকে জাগ্রত করাই সালাত। আর আপন আত্মা য্খন চেতন হবে শুধু তখনই সালাত কায়েম হবে।
আবার পূজা অর্থ = পূ + জা
= পূণ + জাগরণ
অর্থাৎ আপন আত্মাকে পূণরায় জাগরণ করাই পূজা। এখানে আত্মা দেহমুক্ত অবস্থায় পূর্বে জাগরণ ছিল, দেহের মধ্যে ঐ ঘুমন্ত আত্মাকে আবার পূণরায় জাগরণ করতে বলা হয়েছে। আর ইহাই প্রকৃত।।।
0 Comments