সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

 মােরাকাবা-মােশাহেদার নিয়মগুলাে পীর তার মুরিদকে শিক্ষা দেন এবং এই দায়েমি সালাতের মাধ্যমেই নিজেকে জানা ও চেনা যায়। এই দায়েমি সালাতই হলাে সুফিবাদের মূল এবং একমাত্র দর্শন।

৫২. সারাটি জীবন আপন পীরকে বাবা বাবা বলে ডাকলেন অথচ পেলেন না কিছুই। এই বাবা বলে ডেকে কোনাে লাভ নেই। এখানে পীর বড় নয়, সত্য পাওটাই বড়। তাই একটি পর একটি পীর বদলিয়ে ফেলুন।

৫৩. বিবেক বােবা হয়ে যায় যখন দেখতে পাই মহারাজারও মহারাজা ডাকাতরা আল্লাহর ওলি হয়। আর সারাজীবন সাধু থেকেও কাঁচকলা পায়। কোরান বলছে- ‘ইউতিহু মাইয়াশাউ' -আমি আতা করি যাকে খুশি তাকে।

৫৪. আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আদমের ইচ্ছাটি কোরবানি করে দেবার নামই হলাে প্রেম তথা 'ইশক'। আল্লহর প্রেমে, আল্লাহর ইশকে হজরত আদম এতই মাতােয়ারা ছিলেন যে কঠিন শাস্তিগুলাে হাসিমুখে মাথা পেতে নিলেন।

৫৫. যেহেতু মােমিনের বাহির ও ভেতর এক হয়ে যায় তাই আল্লাহ্ কোরানে ঘােষণা করেছেন যে, তিনি মােমিনের সঙ্গে আছেন বা থাকেন। কিন্তু আমানুষদের সাথে আল্লাহর থাকার কথা কোরানের একটি আয়াতেও পাবেন না।

৫৬. মহানবী হযরত মােহাম্মদ বলেছেন, মানব দেহের অভ্যন্তরে এক টুকরাে গােশত আছে। সেই গােশতটি যদি পবিত্র হয় তবে সমস্ত দেহটি পবিত্র, আর যদি সেই গােশতের টুকরােটি অপবিত্র থেকে যায় তাহলে সমস্ত দেহটাই অপবিত্র।

৫৭. আল্লাহর জেহাদে আকবরের অনুসারীদের জন্য একদিকে রয়েছে অবিরাম ধ্যান-সাধনার কঠোর পরিশ্রমে ধৈর্যধারণ করা, আবার অন্যদিকে মানুষের ঠাট্টা-তামাশা-বিদ্রুপের উপর দাঁড়িয়ে বিশাল ধৈর্যধারণ করে প্রেমের নৃত্য করা।

৫৮. প্রেমের তথা ইশকের আগুন যখন প্রেমিকের তথা আশেকের মনে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, 'ইচ্ছা'র দৃঢ় বাঁধনও তাকে থামিয়ে দিতে পারে না। মৃত্যুর যাতনাও প্রেমের কাছে তুচ্ছ। আইন-কানুন, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, ছােট-বড়, রাজাপ্রজা কোনাে কিছুই।

৫৯. নকশাবন্দি-মুজাদ্দেদি তরিকা, চিশতিয়া-কাদেরিয়া তরিকা, আবু-উলাহ তরিকা, কালান্দারিয়া তরিকার শান গেয়েই গেলেন, ' শান না গাইলেও কিছু আসে যায় না। প্রশ্ন হলাে? আপনি তাে তিন নম্বর ছাগলের বাচ্চার মতাে দুধ না পেয়ে শুধু লাফালাফি করেই গেলেন।

৬০. জিব্রাইল মানবের আকার ধারণ করলেই যে মাটির তৈরি বলতে হবে ইহাও যেমন মােটেও সত্য নহে ,তেমনি মহানবী যদিও আমাদেরই মতাে, কিন্তু মােটেও মাটির তৈরি তাে ননই, এমনকি আল্লাহর সেফাতি নুরেরও নহেন, বরং আল্লাহর জাত নুরে নুরময় হলেন মহানবী।

৬১.

আকাশ হতে শয়তানরা সাধকদেরকে আগুনের গােলা নিক্ষেপ করে। এই আকাশটি মনের আকাশ, চিত্তের আকাশসৌরমণ্ডলের আকাশ নয়। শরিয়তি শয়তান থাকে মক্কার মিনাতে, তাকে পাথর মারতে হয়, মারেফতি শয়তান থাকে অন্তরে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

৬২. সর্বপ্রকার আচার-অনুষ্ঠান, ইবাদত-বন্দেগির একমাত্র মূল বিষয়টিই হল খান্নাস নামের শয়তান হতে মুক্ত হও। মুক্ত হতে পারলেই আপনাকে চিনতে পারবে, জানতে পারবে, বুঝতে পারবে। আর আপনাকে চিনতে পারলেই রবকে চেনা হয়ে গেছে বলে ঘােষণা করা হয়েছে।

৬৩. মােরাকাবার (ধ্যান) বিশেষ গুণটি হল তােমার অস্থিরতা, তােমার হা-হুতাশ, তােমার সবরকম অহংকারগুলাে তিন-চারটে মােরাকাবাতেই অনেকখানি দূর হয়ে যাবে। আগুন যেমন কাঠ খেয়ে ফেলে, ধ্যান সাধনা সেরকম অহংকার হতে শুরু করে যাবতীয় দূষণীয় বিষয়গুলাে দূর করে দেয়।

৬৪. শয়তানের প্রভাব হতে সম্পূর্ণরূপে যারা মুক্ত হতে পেরেছেন তারাই মােমিন, আর যারা শয়তানের কথামতাে চলে না, কিন্তু শয়তান দুর্বলরূপে যাদের মধ্যে অবস্থান করে তারাই আমানু' তথা ইমান এনেছে। সুতরাং আমানু’ তথা ইমানদারের সঙ্গে মােমিন' তথা শয়তানমুক্ত মানুষের আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

৬৫. | যে নামাজ নামাজিকে তার পাপসমূহ হতে বিরত রাখে না, সেই নামাজ নামাজই নয়। তার ওই নামাজ পড়া আর না পড়া একই কথা। কারণ নামাজ যেখানে মন্দ কাজ হতে অবশ্যই বিরত রাখে বলে ঘােষণা করা হয়েছে সেখানে মন্দ কাজ হতে যদি বিরত না হতে পারে তাে সােজা কথায় সে নামাজ সম্পূর্ণ নিষ্ফল তথা বেকার।

৬৬. কাজ করাটা বাঁধন নয় বরং এবাদতের অংশ। লােভ মনকে আচ্ছন্ন করে ফেললেই কর্ম বাঁধন হয়। উৎসাহ এবং লােভ এক বিষয় নয়। সুতরাং কর্ম বাঁধন নয় বরং লােভের কামনাটাই বাঁধন। কোনটাকে উৎসাহ বলা হবে আর কোনটাকে লােভ বলা হবে সেটা ব্যক্তির নিয়তের উপর নির্ভর করে। তাই আল্লাহ্ কেবল মানুষের নিয়তটাকেই বেশী গুরুত্ব দেন।

৬৭. মরার আগে মরে যাও, তা হলে আর মৃত্যু নেই। কারণ প্রত্যেকটি মানুষকে মাত্র একটিবারের জন্য অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে বলে ঘােষণা করলেন। মরার আগে কেমন করে মারা যাব? প্রশ্নটিও তিনি করলেন আবার প্রশ্নের উত্তরটিও দিলেন এই বলে যে, তােমার আমিত্ব তােমা হতে সম্পূর্ণ দূর করে দাও, ইহাই হলাে মরার আগে মরে যাবার উপদেশ।

৬৮. অতএব বাজারের বিতর্কমূলক তথাকথিত শরিয়তের ধোঁকায় পড়ে পরস্পর আত্মকলহে লিপ্ত হয়াে না। আপন দেহ হতে আপন রবের মারেফতের দ্বার উদঘাটন করে আল কেতাবের শরিয়ত বুঝে লও, তবেই সকল বিতর্কের অবসান ঘটবে। মারেফতের গােপন কথা আসলে গােপন নয়। সম্যক গুরুর প্রতি ভক্তিযােগ অথবা জ্ঞানযােগের পথ ধরলেই গােপন কথার তালা খুলে আল কেতাবের দ্বার খুলে যাবে।।

৬৯. পবিত্র নফস তথা প্রাণ তথা জীবনের সঙ্গে একত্রে বাস করে নফসটিকে খান্নাস-রূপী শয়তান মােহ-মায়ার জালে আটকিয়ে রাখে। এই মােহমায়ার জালটিকে ছিন্ন করতে পারলেই নফসের নিকট যে-রূহ্ অতীব সূক্ষমরূপে অবস্থান করছে। উহা তখন পরিপূর্ণরূপ ধারণ করতে থাকে। সাধকরা একটানা ধ্যানসাধনা করার পর আল্লাহর বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত হলেই রূহের অতীব সূক্ষম রূপটিকে পরিপূর্ণরূপে দেখতে পেয়ে অবাক বিস্ময়ে হতভম্ব খেয়ে যায়।

৭০. আত্মার বিজ্ঞানী মনসুর-হাল্লাজের আনাল হক তথা 'আমিই একমাত্র সত্য' ঘােষণার গভীরতম রহস্য এখানেই লুকিয়ে আছে। আত্মার বিজ্ঞানী হজরত বায়েজিদ বােস্তামিকে তার এক মুরিদ প্রশ্ন করেছিলেন যে, কী রকম লােকের সাহচর্যে থাকবাে? তার উত্তরে তিনি এটুকুই বলেছিলেন যে, যার মধ্যে আমি এবং তুমি নেই। আত্মার বিজ্ঞানী শামসে তাব্রিজ-এর আমিই সর্বপ্রথম, আমিই সর্বশেষ, আমিই একমাত্র প্রকাশ্য এবং আমিই একমাত্র গােপনীয় ' বলার মাঝে এই গভীরতম রহস্যের ইঙ্গিত বহন করেছে।

৭১.

আমার লেখা সবার জন্য নয়। যারা কেবল আল্লাহর প্রেমিক, যারা কেবল আল্লাহর নৈকট্য কামনা করে, কেবল তাদের। জন্য লিখেছি। প্রেমিক ভাল করেই জানে যে এই পথে কেবল হারাতে হয়, এই পথে নিজেকে বলি দিতে দিতে অগ্রসর হতে হয়। কারণ আমারই মাঝে আরেক নকল আমি লুকিয়ে আছে। যে নকল আমিটি অবিশ্বাস্য ছদ্মবেশ ধারণ করে আসল আমিটাকে প্রতিটি মুহূর্তে ধোঁকার ফাঁদে ফেলছে, সেই নকল আমিটাকে তাড়াতে পারলেই সব সাধনার শেষ হয়ে যায়।

৭২. আনুমানিক দেড় হাজার বছর আগে যে সমস্ত ঘুমন্তর মার্কা কথাবার্তাগুলােকে হাদিস নামে চালিয়ে দিয়েছেন আপনারা, এগুলাে এখন দিবালােকের মতাে পরিষ্কার হয়ে ধরা পড়েছে। সহজ-সরল কাঁচাগলা মােমের মতাে মুসলমানরা আপনাদের এইসব কথাবার্তাগুলােকে বিনা বাক্যে হাদিস বলে মেনে নিয়েছে। আর এখন এই একবিংশ শতাব্দীতে আপনাদের আজগুবি কথাবার্তাগুলাে দিবালােকের মতাে ধরা পড়ছে। তারই নমুনা, তারই দৃষ্টান্ত আমরা একে একে তুলে ধরতে চাই।

৭৩. সেই একমাত্র উপদেশটি আমরা বহুপূর্বে হতেই পেয়েছি এবং ইসলাম অতি স্পষ্ট ভাষায় বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘােষণা করলেন, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে সে তার প্রভূকে তথা আল্লাহকে চিনতে পেরেছে। এখানে আল্লাহকে চিনে নেবার তাগিদই দেওয়া হয় নি, বরং নিজেকে চেনার উপদেশ দিয়েছেন এবং এ-ও বলা হয়েছে যে, আপনাকে চিনতে পারলেই আল্লাহকে চেনা। হয়ে গেছে। সমস্ত ইসলামি দর্শনের মূল ভিত্তি তথা স্বতঃসিদ্ধ সত্য (একশিয়ােমেটিক টুথ ) হলাে নিজেকে চেনা (নাে দাই সেলফ) |ৱ

৭৪.

দিলের অপরিষ্কার প্লেটটির নাম হলাে নফসে আম্মারা। সাধক যখন দিলের প্লেটটি পরিষ্কার করার জন্য উঠে-পড়ে লেগে যায় তখন দিলের প্লেটের নাম হয় নফসে লাউয়ামা তথা সংগ্রামরত নস, জেহাদে লিপ্ত নস। যখন দিলের প্লেটটি একদম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায় তখনই দিলের প্লেটটি নামধারণ করে নফসে মােতমায়েন্না তথা পরিতৃপ্ত এবং পবিত্র। নস। উভয় ফেরকার সত্যে অবস্থান করার অজস্র দলিল কোরান-হাদিস হতে দেওয়া হয়। কিন্তু সুন্নির দলিল শিয়া গ্রহণ করে না, আবার শিয়ার দলিল সুন্নি গ্রহণ করে না। তা যত বড়ই সত্য হােক না কেন। এটাকেই বলা হয় ‘জন্মই আমার। আজন্ম পাপ।'

৭৫. বিশ্ববিখ্যাত ওলি হজরত বাবা আলাউদ্দিন কালিয়ার সাবেরি বলেছেন যে, ফকিরের শান কী বলে দাও। এইখানে মৃত, আবার অপর স্থানে একই সময়ে নৌকায় পার হয়ে যাচ্ছেন। ইচ্ছে হয় দেহের মধ্যে অবস্থান করলেন, আবার ইচ্ছে হয় দেহ হতে প্রস্থান করলেন। এই বিষয়গুলাে এতই উঁচু যা আমাদের ধারণা করতে কষ্ট হয়। আর ধারণা করতে কষ্ট হবার কথাই, কারণ আজকাল পীর-ফকিরের নামে যে প্রতারণার ফাঁদ পাতা আছে এবং কিছু কিছু প্রতারণা হাতে নাতে ধরা পড়ছে তাতে চুন খেয়ে মুখ পুড়ে দই দেখে ভয় পাবার তাে কথাই। আজ ফকিরি করছে অথচ মােরাকাবা-মােশাহেদা তথা ধ্যানসাধনা | একদম নাই হয়ে গেছে। ধ্যানসাধনা ছাড়া ফকিরি হয় কেমনে, আমার জানা নাই।


Post a Comment

0 Comments