শামস তাবরিজি (ফার্সি : ﺷﻤﺲ ﺗﺒﺮﯾﺰﯼ ) বা শামস আল দিন মোহাম্মদ (১১৮৫-১২৪৮) ছিলেন একজন ইরানী সুফি ব্যাক্তিত্ব।
সিপাহ সালার, মাওলান রুমি রহঃ এর অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং ভক্ত যিনি তাঁর সাথে চল্লিশ দিন অতিবাহিত করছিলেন। শাসম ইমাম আলা আল-দিন এর পুত্র ছিলেন।
শামস তাবরিজি রহঃ এর ধর্ম ইসলাম
জন্ম – ১১৮৫ তাবরিজ, ইরান
মৃত্যু – ১২৪৮ খৈয়, ইরান
শামস তাবরিজি রহঃ এর একমাত্র উত্তরসূরী মাওলানে জালালুদ্দিন রুমি রহঃ।
হযরত শামস তাবরিজি রহঃ বিশ্ব বিখ্যাত সুফি ও ইসলামিক দার্শনিক মাওলানা জালাল উদ্দিন রহঃ এর প্রানের মুর্শিদ কেবলা। শামস তাবরিজি রহঃ অনেক উঁচু স্তরের আউলিয়া ছিলেন। তিনি সবসময় চটের ছালা পড়ে পাগল বেশে আল্লাহর প্রেমে মত্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতেন যাতে লোকে তাকে চিনতে না পারে।রুমির সাথে যখন শামসেত তাবরিজির পরিচয় হয় তখন তাবরিজির বয়স ষাটের কোঠায়।তাবরিজি ছিলেন খুবই শক্তিশালী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ। তাঁকে লোকে ‘পাখি’ বলে ডাকতেন। তাঁকে নিয়ে মানুষের ছিল বিপুল কৌতূহল। রহস্যঘেরা ছিল তাবরিজির জীবন। এর বড় কারণ, তিনি এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতেন না। খুব দ্রুত জায়গা বদল করে অন্যত্র চলে যেতেন। তবে তাবরিজি সবসময় একজন প্রভাবশালী সাগরেদ খুঁজতেন। ভাবতেন তাঁর একজন যোগ্য উত্তরসূরি প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত রুমির মধ্যেই সেই গুণ খুঁজে পেলেন তাবরিজি।যখন রুমির একুশ বছর, তাবরিজি তখন তাঁর শিষ্য হওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে জানান। পরে ভেবে দেখলেন, বয়সটা মোটেও তাঁর সাগরেদ হওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। তিনি আরো ষোল বছর অপেক্ষা করলেন।তাবরিজির সাথে যে নিবিড় এবং গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা-ই রুমিকে তাঁর পূর্ণ শিষ্য হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। একসময় রুমি তাঁর জন্মভূমিতে গুরুকে নিয়ে আসেন। এরপর এক নতুন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁদের।তাবরিজি ভূমিহীন দরিদ্র ছিলেন। তার ওপর ছিলেন মারাত্মকভাবে সমাজ-বিরোধী। রুমির ব্যক্তিত্ব ছিল সাংঘাতিকরকম আকর্ষণীয়। ধীরে ধীরে তাবরিজির কাছে রুমির ব্যক্তিত্ব একটি বড়সড় ইস্যু হয়ে ওঠে। অপরদিকে তাবরিজির গতিবিধি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, শ্রেণিগত অবস্থান, ধর্মকর্ম কোনোকিছুই চলমান সমাজের জন্য অনুকূল ছিল না। এমনকি একপর্যায়ে তাবরিজিকে তাঁর ধর্মকর্মের জন্য হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। তাবরিজিকে বলে দেওয়া হয়, এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে, না হয় হত্যা করা হবে। সবমিলিয়ে তাবরিজিকে নিজের এলাকায় এনে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখোমুখি হন রুমি। তবে গভীর সংকটে পড়ে তাবরিজিকে কোনিয়ায় ফিরে যেতে হয়।সমাজের প্রথাগত সংস্কৃতির ভয়ে দমে যাননি রুমি। কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে। তাই সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে স্বর্ণকারের সাথে যে কৌশল নিয়েছিলেন, একই পন্থা অনুসরণ করলেন রুমি তাবরিজির ব্যাপারেও। সামাজিক সীমাবদ্ধতার তুলনায় রুমি তাঁর শক্তির ব্যাপারে পুরোপুরি সচতেন ছিলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, তাবরিজিকে তাঁর পরিবারে তাঁর সমাজে যে করেই হোক স্থান দেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রুমি তাঁর খুবই কাছের সেময়ে কিমিয়াকে শামস তাবরিজির সাথে বিয়ে দেন।
কিমিয়ার তখন পনেরো বছর বয়স। কথিত আছে, কিমিয়ার সাথে বিয়ে হওয়ার পর জীবনে প্রথম তাবরিজি কারো প্রেমে পড়েন। তাবরিজি আরো বেশি বিস্মিত মুগ্ধ হয়ে পড়ে রুমির প্রতি। শিষ্য বানাতে গিয়ে পরিস্থিতিতে পড়ে শিষ্যের কন্যাকে বিয়ের ঘটনা তাঁর জীবনে এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে যায়। বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পর কিমিয়া হঠাত্ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রী বিয়োগের বিষয়টি গভীর আঘাত হানে তাবরিজির জীবনে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে রুমি-তাবরিজির সম্পর্কের প্রায় সমাপ্তি ঘটে।
কথিত আছে, কিমিয়ার চলে যাওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাবরিজি অদৃশ্য হয়ে যান। যেন বনের পাখি বনেই ফিরে গেল। কিন্তু তাবরিজি আদৌ রহস্যময় হয়ে গেলেন, হারিয়ে গেলেন নাকি কোনো পক্ষ তাঁকে গুপ্ত-হত্যার মাধ্যমে দুনিয়া থেকে চিরতরে অদৃশ্য করে ফেলে। এমন গুঞ্জন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তখন। পরবর্তীকালে এ নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হয়।
তাবরিজির এভাবে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে বহু গল্প থাকলেও, অনেকে এর বাস্তব কারণ তলিয়ে দেখাটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।তার উঁচু স্তরের মারিফতের কথা না বুঝতে পেরে শরীয়তের কাজী গন তাকে চাবুক মেরে চামড়া খুলিয়ে ফেলার ফতোয়া দিলে শামস তাব্রিজ এক টান দিয়ে নিজের গায়ের সমস্ত চামড়া খুলে দিয়ে বলেন “এই নে তোর শরীয়ত, আমার কাছে মারিফত থাকলেই চলবে। এরপর আল্লাহর কুদরতে তার গায়ের চামড়া আগের মত অবিকল ফিরে আসে।”
তার ভিতর আল্লাহ এতই শক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি এক-নজরে সাধারন মানুষকে কুতুবে আউলিয়া বানিয়ে দিতে পারতেন।
0 Comments